নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজধানীর মহাখালীতে হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনালে মদপানের পর বিল চাওয়ায় বার ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে বনানী থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পৃথক অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার তিনজনের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত পাওয়া গেছে। তিনি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুলতান। তবে বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। মামলার দুই নম্বর আসামি সুলতান রয়েছেন। তিনি তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের একজন সহ-সভাপতি ও ২০০৮-০৯ সেশনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী।
বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অন্যসব পালাতক অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শিগগিরই তাঁদেরকেও গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
গত শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে মহাখালীর জাকারিয়া বারে মদপানের পর টাকা না দিয়ে উল্টো ভাংচুর করে কয়েক লাখ টাকা ও শতাধিক মদের বোতলসহ বিভিন্ন জিনিস লুট করার অভিযোগ ওঠে সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় বার কর্তৃপক্ষ ৪/৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৫০ জনের নামে বনানী মডেল থানায় মামলা করেন।
বার কর্তৃপক্ষ জানায়, ভাঙচুর এবং লুটপাটে নেতৃত্ব দেয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান সাগর। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন রাহুল, সুলতান ও শাওন, সহ-সম্পাদক শাওন ও সাব্বির, উপ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নিলয় সেন, উপ-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মামুন, উপ-গণযোগাযোগ সম্পাদক বিজয় খালীদ এবং কর্মী কাউসার ও শাহিন মাতব্বরসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিপন মিয়ার অনুসারী।
এদিকে বারে হামলার নিউজ করায় পালাতক থেকেই তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির এক সাংবাদিককে হুমকি দিয়েছে অভিযুক্ত হামলাকারী ও তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের উপ-গণযোগাযোগ সম্পাদক বিজয় খালীদ।
মহাখালীর স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগ নেতারা চরম বেপরোয়া। হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও চাঁদাবাজি তাদের নিয়মিত ঘটনা। প্রায়ই তাদের সাথে মহল্লার বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও মুদি দোকানে বিল নিয়ে ঝামেলা বাঁধে। টাকা চাইলেই দলবল নিয়ে এসে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট করে। এর আগেও তাঁরা মহাখালী ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় অসংখ্য মুদি দোকান ভাঙচুর করেছিল। সেদিন তাদের ভাঙচুরের তালিকা থেকে বাদ যায়নি কাউন্সিলরের অফিসও।
অন্যদিকে বারে হামলায় অভিযুক্তদের বাঁচাতে মরিয়া কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা। হামলাকারীদের পক্ষে সাফাই গাইছেন। তাদের নির্দোষ প্রমাণ করতে নানা রকম কাহিনী বানাচ্ছেন।
জাকারিয়া বারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বনানী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম মাহফুজ (২৮ সেপ্টেম্বর) তার ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন- (পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো)
“আজকে আমার মনের ভিতরে একটা কথা ঘোর পার্ক খাচ্ছে , গত কয়েক দিন আগে আমাদের ছাত্রলীগের দুই নেতার সাথে বার্ডেম হাসপাতালে একটা তুচ্ছ ঘটনা হয় ,তার পর থেকে ছাত্রলীগ কিছু করলে সেটা নিউজ হয়ে যাচ্ছে , এ নিউজ গুলো কে বা কার করাচ্ছে বুজতেছিনা , কারা জানি কোমড়ে রসি বেধে ছাত্রলীগের বদনাম করার জন্য মাঠে নামছে , এবং অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু পুলিশ ভাইয়েরয়া বলে ছাত্রলীগ কে গোনার সময় নেই ,কারন কি কিছু বুজি না….”
একই দিন মিরাজুল মাহফুজ আরেকটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন- (পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো)
“আসলে কাহিনী টা কি কিছুই বুজি না ,একজন অবৈধ মদ ব্যাবসায়ীর কথায় দেখি বিভিন্ন টিভিতে নিউজ হয়, এ সব মদের দোকান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর সামনে এ গুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর আশে পাশে চালানো ঠিক না ,,এগুলো নিয়ে কেউ নিউজ করে না ….”
মিরাজুল মাহফুজ এর এ বক্তব্যের বিষয়ে হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনাল এর জেনারেল ম্যানেজার খোকন চৌধুরী বলেন, আমরা সরকার থেকে লাইসেন্স নিয়ে বহু বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি তাহলে আমাদের ব্যবসা অবৈধ হয় কিভাবে। এতো বড় একটা অপরাধ কান্ডের নিউজ মিডিয়াতো করবেই। এসব কথাবার্তা অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
এছাড়া বারের ম্যানেজার গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বারে ছাত্রলীগ কখনো কোনো মাসোয়ারা চায় না। তবে তারা এখানে এসে ডিসকাউন্ট চায়। আমরা তাদের ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দেই। তারা এতে খুশি থাকে।